RAS

_

What is RAS ?

Recirculating Aquaculture System :  এটি বদ্ধ পরিবেশে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং মাছের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মাছ চাষের একটি আধুনিক পদ্ধতি । এতে ব্যবহৃত পানিকে বার বার পরিশোধন করে ব্যবহার করা হয় । ফলে পানির অতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করা যায় । এখানে প্রায় ৯৫% শতাংশ পানি পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে সাশ্রয় হয় । বিশুদ্ধ পানির উৎস হিসেবে গভীর নলকূপের পানির ব্যবহার করা হয় যা সবধরনের দূষণমুক্ত । অর্থাৎ এটি সর্বাধুনিক এমন একটি মাছ চাষ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে নিরাপদ মাছ উৎপাদন করা হয় । এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছ সব ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মুক্ত, সব ধরনের Virus জনিত রোগ থেকে মুক্ত এবং গন্ধ বিহীন ও সর্বোপরি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ।

_

বাংলাদেশের জন্য RAS এর প্রয়োজনীয়তাঃ

যেকোন ভাবেই হোক আমরা আমাদের মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন এবং উৎপাদন ক্ষেত্র সমূহ দূষিত করে ফেলছি । বেশ কিছু জলাভূমি এবং জলাশয় ভরাটের মাধ্যমে এবং বাকিটুকু শিল্প বর্জ্য ফেলে, তাই আমাদের কাছে চাষ করা ছাড়া মাছের চাহিদা মেটানোর আর কোন পথ নাই । মাছ আমরা ২ ভাবে চাষ করতে পারি খোলা জায়গায় অর্থাৎ পুকুরে বা উন্মুক্ত জলাশয়ে এবং  RAS   বা বদ্ধ পরিবেশে মাছ চাষের মাধ্যমে । যেহেতু আমাদের দেশে উন্মুক্ত জলাশয় বা পুকুরে উৎপাদিত মাছ দূষণ মুক্ত বা নিরাপদ নয় এবং একই সাথে পুকুর বা জলাশয়ে মাছ উৎপাদনের পরিমাণও অসন্তোষজনক  । তাই RAS এর মাধ্যমে মাছ চাষই একমাত্র সমাধান ।

_

পুকুর বা উন্মুক্ত জলাশয়ে RAS পদ্ধতিতে মাছ চাষের তুলনামূলক তথ্যচিত্রঃ

প্রচলিত পদ্ধতি RAS পদ্ধতি
জমি অধিক জমির প্রয়োজন ১০ ভাগের ১ ভাগ জমি প্রয়োজন
জমির তুলনায় উৎপাদন ১০ টন শিং মাছ উৎপাদনের জন্য প্রায় ১০ বিঘা জমি দরকার। উৎপাদন ১-২ কেজি/ঘনমিটার। ১০ টন শিং মাছ উৎপাদনের জন্য মাত্র ৬০০০ sft shed যথেস্ত। উৎপাদন ৬০-৭০ কেজি/ ঘনমিতার।
খাবার পরিমান ১ কেজি মাছ উৎপাদন ৩০% প্রোটিন সম্বলিত ২.৫ কেজি খাবার। ১:২.৫ FCR ১ কেজি মাছ উৎপাদন ৩০% প্রোটিন সম্বলিত ১.২ কেজি খাবার। ১:১.২ FCR
জমির মূল্য অধিক জমি – বেশি মূল্য স্বল্প জমি – কম মূল্য
ব্যবস্থাপনা সার্বিক পরিচালনায় অন্তত ৮ জন লোকের প্রয়োজন প্রকল্প প্রিচালনায় মাত্র ২ জন দক্ষ লোকই যথেষ্ট
সুরক্ষা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ব্যক্তিগত শত্রুতার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই ঘরের ভিতর স্থাপিত হওয়ায় মাছ সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত
গুনগতমান ফসলি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে তা  বৃষ্টির পানির সাথে এই পুকুর বা জলাশয়ের পানিতে এসে মিশে যায় এতে মাছের গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এর ফলে মাছের পুষ্টিমান কমে যায় বাইরের কোন পানি এখানে ব্যবহারের সুযোগ নেই,তাই কোনোভাবে ক্ষতিকারক কোন রাসায়নিক সার,কীটনাশক মাছের শরীরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।তাই মাছ একেবারে নিরাপদ যাকে বলে organic
ক্ষতিকারক দিক এই রাসায়নিক পদার্থ সমূহ মাছের মাধ্যমে আমাদের শরীরে Toxic আকারে চলে আসে যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর যেহেতু মাছে কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক মিশে  যাওয়ার সুযোগ নেই তাই এই মাছের মাধ্যমে কোন প্রকার Toxic মানবদেহে আসার সুযোগ নেই
রোগাক্রান্তের হার এছাড়াও পুকুর বা জলাশয়ের পাড়ে গাছের পাতা পড়ে পানি দূষিত করে এবং একই সাথে পুকুরের মাটিকে নষ্ট করে।এর মাধ্যমে Virus ছড়িয়ে পরে এবং মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে যায় যেহেতু এখানে বদ্ধ পরিবেশে মাছ চাষ করা হয় তাই এখানে গাছের পাতা, মাটি বা অন্য কিছুর মাধ্যমে মাছে  Virus ছরিয়ে পরার সুযোগ নেই।ফলে মাছও রোগাক্রান্ত হয় না।
আর্থিক সুরক্ষা এতে মাছ অপরিণত বয়সে মারা যায় ফলে খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে মাছ অপরিণত বয়সে মারাও যায়না ফলে খামারিও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।খামারি বাজারের চাহিদা মোতাবেক পরিণত মাছ বাজারজাত করতে পারে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে
মাছের বৃদ্ধি উন্মুক্ত জলাশয়ে শীতকালে মাছের উৎপাদন এবং বৃদ্ধিতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে।এসময় মাছ পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে পারেনা তাই বৃদ্ধিও ঘটেনা। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ ও তাপমাত্রা রক্ষার কারনে মাছের বৃদ্ধি এবং উৎপাদন সারা বছর একি থাকে অর্থাৎ শীতকালে উতপাদনে ব্যাঘাত ঘটেনা।

আমাদের মোট জমি জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল । প্রত্যহ আমরা আমাদের চাষযোগ্য জমি বহুবিধ ব্যবহারের ফলে কমিয়ে ফেলছি ।যেমন- বাসস্থানের কাজে, শিল্প কারখানা স্থাপনের কাজে, রাস্তা ঘাট তৈরি এবং বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকাণ্ড । একই সাথে মাছের চাহিদা মেটানোর জন্য যদি আমরা উন্মুক্ত জলাশয় বা পুকুর খনন করি তাহলে একটা সময় আমাদের চাষযোগ্য জমি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে, জার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে ।পুকুরের তুলনাই প্রায় ৫০ গুন বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করার ফলে এ পদ্ধতিতে জমির পরিমান অনেক কম লাগে । যার জন্য আমরা আমাদের চাষযোগ্য জমির উপর চাপ কমাতে পারি ।
এখন আমাদের চাষযোগ্য জমির উল্লেখযোগ্য পরিমানে ব্যাবহার না করে মাছের চাহিদা মেটানোর একমাত্র পথ RAS বা Reciculating Aquaculture System. নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এবং তাপমাত্রা রক্ষা করার কারনে মাছের বৃদ্ধি এবং উৎপাদন সারা বছর একই থাকে অর্থাৎ শীতকালে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে না ।

RAS  প্রকল্পে যা থাকবেঃ

  • Culture Tank
  • Mechanical Filter
  • Protein Skimmer
  • Biological Filter
  • UV Sterilizer
  • Degassing
  • Oxygen Generator
  • Oxygen Con
  • Ozone Generator
  • Roots Blower

RAS প্রযুক্তি সংক্রান্ত ধারণা:

  • এখানে ট্যাঙ্কে মাছ চাষ করা হয়।
  • মাছের বর্জ্য ও খাবারের উচ্ছিষ্ট সহ পানি মেকানিক্যাল ফিল্টারে পরিশোধিত হয়ে বর্জ্য থেকে আলাদা হয়।
  • পরবর্তীতে এই পানি বায়োফিল্টার বিশেষ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কার্বন ডাই অক্সাইড, অ্যামোনিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাস মুক্ত করা হয় এবং সেই সাথে পানিতে অক্সিজেন দ্রবীভূত করা হয়।
  • এই পরিশোধিত পানি পুনরায় ট্যাঙ্কে ফেরত যায়। এটি একটি সার্বক্ষণিক প্রক্রিয়া।
  • এই প্রক্রিয়াতে ট্যাঙ্কে সামান্য পরিমাণ পানি ঘাটতি হয় যা নলকূপের পানি দ্বারা পূরণ করা হয়
  • সমস্ত প্রক্রিয়াটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ পরিচালিত।

প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতার সম্পর্কে ধারণা:

RAS একটি অত্যন্ত লাভজনক প্রকল্প। উদাহরণস্বরূপ বছরে ১০ টন সাদা মাছ উৎপাদনে সক্ষম একটি প্রকল্পের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রকল্পের স্থাপনা খরচ, উৎপাদন খরচ এবং মাছের বিক্রয়মূল্য বিবেচনায় ২-৩ বছরের মধ্যে বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া সম্ভব ।

বাজারজাতকরনসুবিধা সম্ভাবনা :

বাংলাদেশে বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থায় বিভিন্ন সাদা মাছের উচ্চ চাহিদা রয়েছে। বিশেষত, অত্যন্ত স্বল্প পরিসরের প্রয়োজন হওয়ায় এ প্রকল্প শহরের ভিতরে অথবা আশেপাশে স্থাপন করা সম্ভব।

  • উৎপাদিত মাছ শহরের বাজারে ভাল বিক্রয় মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা।
  • জীবন্ত সাদা এর চাহিদা ও বাজার মূল্য সবসময়ই অত্যন্ত বেশী। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে ২০০ কেজি মাছ বিক্রয় অত্যন্ত সহজ।
  • সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত পানি ও পরিবেশে চাষ এবং উন্নত মানের খাবার ব্যবহৃত হওয়ায় এই প্রকল্পে উৎপাদিত মাছের গুনগত মান ও স্বাদ সাধারণ মাছের চেয়ে ভালো।
  • দূষণমুক্ত, রোগমুক্ত ও ফরমালিন মুক্ত মাছ হওয়ায় ক্রেতারা সরাসরি প্রকল্প থেকে মাছ ক্রয়ে আগ্রহী হবেন।
  • উঁচু মানের মাছ হিসাবে রেস্টুরেন্ট ও বড় সুপারমার্কেট গুলো সরাসরি প্রকল্প থেকে মাছ কিনতে আগ্রহী হবে।
  • ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ট্যাঙ্ক থেকে তাৎক্ষনিক বিক্রয় সুবিধা।